FL7

 আপনি মানুন বা না মানুন, আপনার জীবনে যেকোনো মুহূর্তে ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, লোক দেখানো বিশাল খরচ না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষত বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, পূজা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক সঞ্চয় শুধুমাত্র ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে খরচ হয়ে যায়। সন্তান জন্মের পর যদি এক লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়, তবে সেই টাকা মাল্টিপ্লাই হয়ে সন্তানের বিশ বছর বয়সে একটি ভালো পরিমাণ অর্থ হয়ে উঠবে, যা তার ভবিষ্যতে কাজে আসবে।

আপনার আয় করা টাকা নিজেরাই মাল্টিপ্লাই করুন এবং সন্তানদেরও টাকা মাল্টিপ্লাই করতে শেখান। ছোট থেকেই ফাইনান্সিয়াল অ্যাডভাইস দিন। সন্তানকে প্রোডাক্টিভ এবং নন-প্রোডাক্টিভ ইনভেস্ট সম্পর্কে জ্ঞান দিন, যেমন গ্যাজেটের পরিবর্তে ধাতু কেনা উচিত, কারণ ধাতুর রিসেল ভ্যালু থাকে।

সন্তানকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সমস্ত অর্থ খরচ করা না, বরং বিয়ে দিয়ে সন্তানকে নামে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিন। অসময়ে দরকার পড়লে তা কাজে আসবে।

জমির চেয়ে বাড়ির ভ্যালু বেশি করবেন না। তবে বাড়ি বা ফার্নিচারের চেয়ে ব্যাংকের লকারে সোনা এবং লিকুইড মানি বেশি রাখুন, কারণ দুঃসময়ে ঘরের একটা টুকরাও আপনি সেল করতে পারবেন না, কিন্তু সোনা বা টাকা দিয়ে সেই দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পারবেন। খারাপ সময় বলে কয়ে আসে না, এবং এই পৃথিবীতে কোনও কিছুরই গ্যারান্টি নেই, আপনার শরীরেরও না।

যোগ্যতাপূর্ণ চাকরিতেও ফিনান্সিয়াল সিকিউরিটি নেই। তাই সন্তানকে বহু খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে শেখান। একটি কাজ ছোটো নয়—এই বোধ তৈরি করুন। বইয়ের বাইরের বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন কাজ শেখান, কারণ শুধুমাত্র পেটে শিক্ষা থাকলেই ক্যারিয়ার সফল হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

কিছু টাকা জমিয়ে রাখুন। বাড়ি করার সময় মনে রাখবেন, যতটুকু বাড়ি করলে স্বচ্ছন্দে থাকা যায়, ততটুকুই বাড়ি করুন। সেই পরিমাণ টাকা MIS (Monthly Income Scheme) করে রাখুন যাতে ঠেকে গেলে অন্তত ডাল ভাত খেয়ে মাস কাটতে পারে। আগামী দিন কী ধরনের ক্রাইসিস আসবে, আমরা কেউ জানি না। চাকরি, ব্যবসা বা বাণিজ্য কোনো কিছুতেই গ্যারান্টি নেই। চাকরিতে পেনশনেরও একশো ভাগ গ্যারান্টি নেই।

স্ট্যাটাস মেনটেন করার জন্য সন্তানকে সরকারি চাকরির দিকে ফোর্স করবেন না। সরকারি, বেসরকারি, ব্যবসা—কোনোটাতেই পুরোপুরি নিরাপত্তা নেই। তাই যার যে দিকে ইচ্ছে সেদিকে কাজ করুক।

বিভিন্ন দিকে উপার্জনের মনোভাব রাখতে হবে। মনে রাখবেন, উপার্জনটাই বড়। টাকা এবং সন্তানের মেধা ব্যালেন্স করে তাকে পড়ান। অযথা উচ্চশিক্ষা বা ডিগ্রির পিছনে ছুটলে সময় এবং টাকা দুটোই ব্যয় হবে, তাই সন্তানের স্কুলের গণ্ডি পেরোলেই সুনির্দিষ্ট গোল সেট করুন। সন্তান যতই মেধাবী হোক না কেন, তাকে এমন কিছু এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ শেখান যা ভবিষ্যতে তাকে টাকা এনে দেবে।

হাতে কলমে কাজ, কারিগরি জ্ঞান, ছোটো ব্যবসা, পার্ট টাইম জব—এ সবকিছুতেই তাকে অভ্যস্ত করান পড়াশোনার পাশাপাশি, কারণ জীবনের পঁচিশ ত্রিশ বছর যদি বই পড়ে পার করে দেয়, তবে অফিস ওয়ার্ক ছাড়া অন্য কিছুতে তেমন যোগ্যতা থাকতে পারে না।

মোদ্দা কথা, সবকিছুকেই বিজনেস মাইন্ডে দেখতে হবে। অন্তত এক জায়গায় বিনিয়োগ ডুবে গেলে যেন আরেকটি ভেসে থাকে।

এই বার্তাটি জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গঠিত, যেখানে ফাইনান্সিয়াল সচেতনতা এবং সঠিক সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে আত্মনির্ভরশীলতা তৈরি করতে সাহায্য করবে।


সংগ্রহীত

Contact Us